বর্তমানে চিকুনগুনিয়া নিয়ে অনেকেই ভয়ে আছেন। এই রোগটি নিয়ে ভয়ের তেমন কিছুই নেই। সাধারণ জ্বরের মতোই এটি এক প্রকার ভাইরাস জ্বর। আমাদের পরিচিত এডিস মশাই এর বাহক। প্রথম আফ্রিকার তানজানিয়ায় ১৯৫৩ সালে এর মহামারী সম্পর্কে জানা যায়। এর আঞ্চলিক একটি মজার নাম হচ্ছে ‘ল্যাংড়া জ্বর’।
যেভাবে ছড়ায়:
এই জ্বরের কারণ চিকুনগুনিয়া ভাইরাস। এটি এক প্রকার RNA ভাইরাস। বাহক এডিস মশা। এটার চক্র হলো, মানুষ >মশা> মানুষ। আক্রান্ত গর্ভবতী মা থেকে সন্তানে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে মায়ের দুধের মাধ্যমে ছড়ায় না। তাই মায়ের দুধ খাওয়াতে সমস্যা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে চলাফেরা বা কোনো সম্পর্ক স্থাপন করলেও সমস্যা নেই। শুধুমাত্র মশার মাধ্যমেই এ রোগ ছড়ায়।
চিকুনগুনিয়া জ্বরের লক্ষণ। ছবি: সংগৃহীত
লক্ষণ:
এ রোগে সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যায়:
(১) হাই গ্রেড জ্বর। জ্বর 102° থেকে 104°F পর্যন্ত হতে পারে। এই জ্বরে সাধারণত কাঁপুনি থাকে আবার নাও থাকতে পারে। জ্বর অন্য সাধারণ জ্বরের মতো ঘাম দিয়ে ছাড়বে না। পাঁচ থেকে সাতদিন পর্যন্ত এই জ্বর থাকে। আবার দুইদিন পর হঠাৎ করে জ্বর ভালো হয়ে যেতে পারে।
(২) হাড় এবং জয়েন্টে ব্যথা:চিকুনগুনিয়াতে খুবই বেশি জয়েন্টে ব্যথা হয়। সাধারণত হাঁটু, গোড়ালি, পিঠ, হাত, ঘাড় এইসব জায়গায় ব্যথা হয় বেশি। এমনকি জ্বর ছেড়ে যাওয়ার এক মাস পর্যন্তও জয়েন্টে ব্যথা থাকতে পারে।
(৩) দুর্বলতা: এই জ্বরে শরীর খুবই দুর্বল হয়ে যায়।
(৪) র্যাশ: এ রোগে র্যাশ দেখা দেয় জ্বরের প্রথম থেকে তৃতীয় দিনের মধ্যেই। সাধারণত মুখ, ঘাড় এবং পিঠে র্যাশ ওঠে। তবে পায়ে বা শরীরের অন্য অংশেও এই র্যাশ হতে পারে। ডেঙ্গুতে র্যাশ দেখা দেয় ষষ্ঠ দিনে। র্যাশ এর সাথে চুলকানিও থাকতে পারে।
(৫) বমি বমি ভাব, খাদ্যে অরুচি, মাংসপেশীতে ব্যথা।
(৬) মাথাব্যথা, চোখে ব্যথা ইত্যাদি।
এছাড়া বিরল ক্ষেত্রে মুখে ঘা, বমি, ডায়রিয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, মেন্টাল কনফিউশন ইত্যাদি হতে পারে।
রোগ নির্ণয়:
এর জন্য ডাক্তারের সাহায্য জরুরি।
প্রথমত, লক্ষণ দেখে।
দ্বিতীয়ত, রোগীর চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমণের ইতিহাস দেখে।
তৃতীয়ত, একদম কনফার্ম হবার জন্য ডাক্তার আপনার কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করবেন যেন অন্যকোনো রোগকে চিকুনগুনিয়া না ভাবা হয়। রক্ত পরীক্ষাসহ, ভাইরাল RNA, এন্টিবডি ইত্যাদি পরীক্ষা। তবে অনেকক্ষেত্রেই ফলস পজিটিভ না ফলস নেগেটিভ আসতে পারে।
চিকিৎসা:
সাধারণ সমস্যায় বাসায়ই রোগীর চিকিৎসা হয়। যদি অবস্থা বেশি খারাপ হয় তখন হাসপাতালে নিতে হবে। তবে এই জ্বরে মৃত্যুর ঘটনা নেই বললেই চলে।